Saturday 7 March 2015

নারীবাদী কবিতা

এভাবে কিছু লেখা যায়না যারা কষ্ট পেয়ে গ্যাছে সবাইকে পাশে নিয়ে বসতে হয় তারপর ঢুকে পড়তে হয় নিজের ভেতর পাতায় পাতায় অরণ্যের চলমান ডালে ছাপ রেখে গিয়েছে সময় আমার সমস্ত জন্মই একদেশদর্শিতায় দুষ্ট সব খারাপ ভালো সোজাসুজি দেখতে গিয়ে সমতলও চোখে পড়েনা আজকাল আর এই গতজন্মের পাপ, তারই প্রতিশোধে — জেনে রেখো এসব কিছুই স্বগতোক্তি নয় তবু, তবু সেই অরণ্যানী মহীরূহের ডালের আড়ালে ঢুকে যেতে হয়, তবু শুঁয়োপোকা গুটি ছেড়ে গেলে প্রত্নচিহ্ন ফসিল হয়ে ফুটে থাকে সারা গায়ে সাপের আঁশের মতো, দ্যাখো এখনো আমার ঘাড়ে আর মুখে দুধ-অম্বলের গন্ধ লেগে আছে শুধু তোমার জন্য মা। এখনো আমি রাত ঘন হলে কোলবালিশের কোলে ছোটো হয়ে যাই রোদ্দুরের মতো রূপকথা ভাবি আর প্রতিটা রাত্তির শুরু হয়- পথে,বাসে উচ্ছ্বলতা দেখে ভোরের চনমনে আলোয় প্রাণ খুলে হেসে উঠি তোকে এখনও ভালোবাসি, তাই, রাধার মতন করে কৃষ্ণনামে কেঁদে উঠি আমি প্রচার চালিয়ে যাই সাম্যবাদী সংঘের হয়ে মানবপুত্রের ব্যাথা তুলে ধরি শত্রুর দিকে জিভ বাড়িয়ে রাখি আঘাতের সামনে, যখন কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত আমার গা আর ইতিহাস থেকে অশ্রুধারা এসে, আমাকে বিধ্বস্ত করে। তোমরা ক্ষমা ক’রো আমার যৌনতা, আমার ক্রোমোজোম এতদিন ধরে শোষণ জ্বালিয়ে রেখেছে তোমাদের ত্রস্ত বিস্রস্ত করেছে ছিন্নমূল করেছে, মা। আদিম কৃষিক্ষেত্র থেকে আজকের ঘরে ঘরে এখনো জ্বলছে সবকিছু। দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে মনুসংহিতা, আর বামিয়ান বুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে জমে উঠছে আফগান কন্যার কান্না মাতাল শ্রমিক বাড়ি এসে বৌ পেটাচ্ছে- ধর্ষিতা হচ্ছে সে: মালিকের খামার বাড়ি বোরখার আড়ালে মুখ লুকিয়ে ফেলছে কর্পোরেট সুন্দরী, থি-এক্স নায়িকা, নিষিদ্ধপল্লী সমস্ত প্রত্যাখ্যান প্রত্যাশিত ছিলো আমি জানি এই সব বিচ্ছেদ তো আমিই নির্মাণ করেছি সমস্ত জন্ম ধঞ্চরে আমিই পঙ্কিল করেছি আমার প্রবেশদ্বার এখন এ’সমস্ত ক্ষমাভিক্ষা মর্গের গলাপচা লাশকে ডিসেকশন করছে, তাও জানি। জানি আরও কান্না উঠে আসবে আমার রক্তাক্ত হাতে, আমার দেবী পর্যন্ত নগ্নিকা, যুদ্ধবাজ উন্মাদিনী, তাই সারা সভ্যতা জুড়ে লেগে থাকছে যুদ্ধের নেশা ভাইয়ের রক্তের স্বাদ আমার সব বুভুক্ষা বঞ্চনা ঢেকে রাখছে লালবাতির তলায় কাঁটাযন্ত্রে প্রেমের পরিমাপ নিচ্ছি। ইতিহাস থেকে সমস্ত কান্না এসে অভিশপ্ত করছে মানুষের বেঁচে থাকা- আমার সমস্ত জাতক অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর মুখোমুখি আজ- প্রতিটি আলিঙ্গনে আমরা উপলব্ধি করি হত্যার অভিসন্ধি প্রতিটি পুরুষের স্পর্শ আমার অসহ্য লাগে, প্রতিনারী আজ আমার গায়ে বুনোভাল্লুকের ঘ্রাণ পায়। পার্বত্য উপত্যকায় আমেরিকান ফাইটার প্লেন আমাকে সন্ত্রস্ত ক’রে তোলে, বোমাবর্ষণ শেষ হ’লে অপেক্ষা করি পরের রাঊন্ডের আর, সন্ত্রাসের সামনে নতজানু হয়ে কামনা করি পৃথিবী পুনর্ভবা হোক।

No comments:

Post a Comment